How Safe is Your Money in Bank After FRDI Bill is Passed


আগামী দিনে ব্যাংকে জমানো আপনার অর্থ কতটা সুরক্ষিত ? - 


আগামী দিনে FRDI Bill পাস হলে আপনার ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা কতটা নিরাপদ ? কাদের স্বার্থে এই বিল ? পড়ুন 


আর্থিক সমাধান ও সঞ্চয় নিরাপত্তা বিল (FINANCIAL RESOLUTION & DEPOSIT INSURANCE BILL) বা ফিনান্সিয়াল আফস্পা : প্রাককথা 


২০০৮-০৯ এ মার্কিন অর্থনীতির গোটা কাঠামো কেঁপে গেল একের পর এক মহাপতনের ধাক্কায়। মার্কিন দেশের একনম্বর ও বিশ্বের তিননম্বর ‘দৈত্য’ ব্যাঙ্ক লেহম্যান ব্রাদার্স দেউলিয়া হয়ে গেল প্রথমে। তারপরপরই ডুবল এআইজি, গোল্ডম্যান স্যাক্স, আমেরিকান এক্সপ্রেস। দেউলিয়া হওয়ার প্রধান কারণ উচ্চ অঙ্কের লিভারেজ। কোনো ব্যাঙ্ক তার সঞ্চিত নগদের যতগুণ লোন দেয় তাকে লিভারেজ বলে - 


লেভারেজ কিভাবে মুনাফা যোগায়  ? জানতে ভিডিওটি দেখুন ২:০০ মিনিট থেকে বিশেষ ভাবে 


লেহম্যান ব্রাদার্সের লিভারেজ ছিল সত্তর; অর্থাৎ তারা সঞ্চিত প্রতি একটাকা পিছু ৭০টাকা লোন দিয়ে বসেছিল। কম্পন ছড়িয়ে গেল গোটা ইউরোপ জুড়ে। গ্রীস, সাইপ্রাস, আয়ারল্যান্ড, পর্তুগাল সর্বত্র দেখা দিল ভয়াবহ মন্দা। অবস্থা এমনই যে শিল্পপতিদের অনাদায়ী ঋণ গোটা পৃথিবীর অর্থনৈতিক জাহাজ ডুবিয়ে দেয় বুঝি। অথচ অধিকাংশ ঋণ নেয়া অর্থই তো স্থায়ী কোনো উদ্যোগে না লাগিয়ে শিল্পপতিরা তুলনামূলক স্থিতিশীল অর্থনীতির তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে ফাটকা খেলায় নিয়োজিত করে রেখেছেন, ওগুলো তো ফেরৎ করার উপায় নেই! সদিচ্ছাও! সুতরাং তড়িঘড়ি জি২০-র আহ্বানে হল ব্যাসেল-৩ সম্মেলন। সেখানে পেশ করা হল ফিনান্সিয়াল স্টেবিলিটি রিপোর্ট, নেওয়া হল কিছু রেসলিউশান। 

ব্যাসেল–৩-এর উদ্দেশ্য হচ্ছে: ব্যাংকের পুঁজির গুণগত মান এবং ধারাবাহিকতা বজায় রাখা, অতিরিক্ত ঋণ গ্রহণ করে বিনিয়োগ করা থেকে ব্যাংকগুলোকে বিরত রাখার জন্য ঝুঁকিভিত্তিক পুঁজির সুরক্ষা, স্বল্পমেয়াদি তহবিলের ওপর ব্যাংকগুলোর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনা (কারণ, সাবপ্রাইম সংকটের সময় এ ধরনের তহবিলই পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলেছিল) এবং ব্যাংকগুলোর আর্থিক স্বাস্থ্য কার্যকরভাবে প্রকাশের ব্যবস্থা করা।


শিল্পপতিদের ঋণ অনাদায়ীই রেখে ব্যাঙ্কের স্বাস্থ্যোদ্ধারের উপায়াদি নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করা হল। প্রথম বিশ্বের অর্থনীতি একটু থিতু হলে বা তৃতীয় বিশ্বের অর্থনীতি দোলায়মান হলে যাতে ওই ফাটকা পুঁজি আবার ঘরে ফিরতে বা অন্যত্র বাসা খুঁজতে পারে, রাখা হল সেই বন্দোবস্ত। স্বভাবতঃই, অন্যদেশগুলোকে এই চুক্তি মান্য করতে চাপ দিলেও নিজে চুক্তিপত্রে সই করেনি আমেরিকা। সই করেনি রাশিয়া বা চীনও। 

কিন্তু ভারত... গলবস্ত্র, মুচলেকাবদ্ধ। আর এখন যে দল দেশ চালাচ্ছে তাদের জন্মই তো মুচলেকা আর বিশ্বাসঘাতকতার গর্ভে। ফলতঃ তারা দ্রুত ব্যাসেলের অন্যতম একটা রেসলিউশান ভারতে প্রয়োগে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। দায়বদ্ধ তারা এখানকার ফাটকা কারবারি ‘ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট’দের রক্ষা করতে। তাই আনা হল FRDI বিল; যা অনাদায়ী ঋণ উশুল না করে নির্দোষ সাধারণ গ্রাহকদের টাকা অন্যায্য ভাবে আটকে দিয়ে ব্যাঙ্কের স্বাস্থ্যোদ্ধারের উপায়, ফাটকা পুঁজির বৈধ দেশত্যাগের ভিসা। আপাতত এটি যুগ্ম সংসদীয় কমিটিতে বিচার-বিবেচনার জন্য জমা আছে।

সমাধানের খানাখন্দ:


বিলের পুরো নাম ফিনান্সিয়াল রেজলিউশান এন্ড ডিপোজিট ইন্সিওরেন্স বিল। অর্থাৎ এ বিলের লক্ষ্য রেজলিউশান, সমাধান খোঁজা; কিসের সমাধান? শুধু ব্যাঙ্ক না, গোটা ফিনান্স সেক্টরের যাবতীয় সমস্যার। আবারও, নাম, অত্যন্ত বিভ্রান্তিকর... কোদালকে কুঞ্জখনয়িত্রী বললে সুন্দর শোনায়, কিন্তু তা খুন্তি হয়ে যায়না বা তার বহুপ্রকার ব্যবহার স্রেফ বাগান খোঁড়ায় সীমিত হয়ে যায় না।

এই বিল প্রথমেই বলছে ব্যাঙ্কিং সেক্টরে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার একাধিপত্য খারিজ করে রেজলিউশান কর্পোরেশন গঠনের কথা। কোনো নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকবেন না এই কর্পোরেশনে; কর্পোরেশন গঠিত হবে SEBI, IRDA, RBI, পিএফ ও পেনশন নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলির থেকে ইউনিয়ন গভর্নমেন্টের মনোনীত প্রতিনিধিদের নিয়ে, থাকবেননা মানবাধিকার কমিশনের অথবা আইন বা বিচার বিভাগের প্রতিনিধি। অথচ এই বিল পাস হলে খারিজ হয়ে যাবে অনেকগুলো শ্রম আইন, কোম্পানি আইন, সাংবিধানিক অধিকার।


সমাধান পরিষদ (Resolution Corporation) ধুঁকতে থাকা আর্থিক সংস্থাগুলিকে পাঁচটা ক্যাটেগরিতে ভাগ করবে: লো, মডারেট, মেটেরিয়াল, ইমিনেন্ট, ক্রিটিকাল। হাড়িকাঠে প্রথম চড়বে ক্রিটিকাল ক্যাটেগরিভূক্ত সংস্থা, ব্যাঙ্ক। পরিষদ তাকে একবছর সময় দেবে পরিস্থিতি শোধরাতে, ফল আশাব্যাঞ্জক হলে দেবে আরো একবছর; তারপর আসবে পাততাড়ি গোটানোর নির্দেশ। সুতরাং গ্রাহককে নিয়মিত খোঁজ রাখতে হবে ব্যাঙ্কের স্বাস্থ্য সম্বন্ধে; পরিস্থিতি ক্রিটিকাল বা ইমিনেন্ট হলে তারা সেখান থেকে টাকা তুলে নিয়ে ফেলবে উন্নত স্বাস্থ্যের কোনো ব্যাঙ্কে। পড়ে থাকবে অসচেতন, অশিক্ষিত মানুষের টাকা যা নিয়ে ব্যাঙ্ক ক্লোজার ঘোষণা করবে। এ প্রক্রিয়া চলতে থাকলে রয়ে যাবে ক’টা বৃহৎ ব্যাঙ্ক, ভারতের বৃহদংশের জনতা চলে যাবে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার বাইরে, মহাজনের গর্ভে।


এতদিন ব্যাঙ্ক দেউলিয়া হবার পরিস্থিতি হলে সরকার বাইরে থেকে হস্তক্ষেপ করে (Bail-out), টাকার জোগান দিয়ে (Recapitalisation), বা অন্য ব্যাঙ্কের সাথে জুড়ে দিয়ে (Merger) সেটিকে বাঁচাত। সে পদ্ধতি খারিজ করে এই বিলের ৫২নং ধারা বলছে বেইল-ইন করতে; ব্যাঙ্ককে নিজের বাঁচার মূলধন নিজেকে জোগাড় করতে। পদ্ধতিও বলে দেয়া হচ্ছে: গ্রাহকদের যে টাকা ব্যাঙ্কে জমা আছে তা আটকে রাখতে পারবে ব্যাঙ্ক নিজের স্বাস্থ্যোদ্ধারের স্বার্থে। 


জনদরদী যুক্তিও পেশ করা হয়েছে যে সরকার কেন ট্যাক্সদাতার পয়সা দিয়ে ‘ইনএফিসিয়েন্ট’ ব্যাঙ্ককে বাঁচাতে যাবে? আপনি বছরে কত টাকা ট্যাক্স দেন আর ব্যাঙ্কে কত জমা রাখেন তার হিসাবটা করলেই এ যুক্তির ফাঁকি পরিষ্কার হয়ে যাবে; আপনার কয়েকহাজার টাকার প্রতি দায়বদ্ধতা দেখিয়ে সরকার আপনার লাখকয়েক টাকার দায় ঝেড়ে ফেলছে। 




ব্যাঙ্কের থেকে কোনোরকম সম্পত্তি গ্যারান্টি না নিয়ে স্রেফ বিশ্বাসের ভিত্তিতে সেখানে টাকা রাখে মানুষ, ‘চাইবা মাত্র পাইবার শর্তে’; নোটবন্দীর সময় সে শর্ত আংশিক লঙ্ঘিত হয়েছিল, আগামীতে আসছে সম্পূর্ণ লঙ্ঘনের দিন। পরিবর্তে দেয়া হবে ব্যাঙ্কের শেয়ার। একটা দেউলিয়া হতে বসা সংস্থার শেয়ারের কোনো মূল্য আছে কিনা জানতে শেয়ার মার্কেট বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার পড়েনা।


সর্বোচ্চ দু’বছর সময়সীমায় ব্যাঙ্ক স্বাস্থ্যোদ্ধার করতে না পারলে? ক্লোজার ঘোষণা করলে? বর্তমান নিয়মে গ্রাহকের এক লক্ষ টাকা ইন্সিওরড। এই ইন্সিওরেন্সের প্রিমিয়াম জমা দেয় প্রতিটা ব্যাঙ্ক DICGC নামক বিমা কর্পোরেশনের কাছে যা RBI এর হাতে বাঁধা। নতুন নিয়মে প্রিমিয়াম জমা দিতে হবে সমাধান পরিষদের কাছে, আর বিমার অংক নির্দিষ্ট করে দেওয়া নেই, ব্যাঙ্ক ও গ্রাহক অনুসারে তা আলাদা আলাদা হতে পারে; ইন্সিওরেন্স কি শেয়ার-পেপার না অ্যাসিওরড গিফট কুপন!!
বিষধর সাপমাত্রেই জোড়া বিষদাঁত থাকে, ৫২ধারার বেইল-ইনের জুড়ি এই বিলের ৫৫নং ধারা। এই ধারা মোতাবেক ‘সুষ্ঠ সমাধানের স্বার্থে’ ব্যাঙ্ক, বিমা বা যেকোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মালিকানার চরিত্র বদল করতে পারবে সমাধান পরিষদ। ক্যাটেগরিভূক্ত সংস্থাগুলোর কর্মী আধিকারিকদের চাকরির শর্ত, বেতন যথেচ্ছে পরিবর্তন করা যাবে, কর্মচ্যূত করা যাবে কোনো ক্ষতিপূরণ না দিয়েই। অথচ রেজলিউশান কর্পোরেশানের বিরুদ্ধে কোনো মামলা আদালতে গ্রাহ্য হবে না। বড়জোর যাওয়া চলতে পারে কোম্পানি আইন ট্রাইব্যুনালে যার ক্ষমতা কোম্পানির ক্ষেত্রটুকুতেই সীমিত। আর এই বিলের প্রস্তাবনা অনেকগুলো আইনভঙ্গ করছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। গ্রাহকের সম্মতি ছাড়াই তার সঞ্চিত অর্থকে শেয়ারে পরিবর্তিত করলে ভাঙা হচ্ছে ১৯৪৯ এর ব্যাঙ্কিং রেগুলেশন অ্যাক্ট ও ১৮৭২ সালের ইন্ডিয়ান কন্টাক্ট অ্যাক্ট। এই বিলের ফলে পরিত্যক্ত হবে ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া অ্যাক্ট (১৯৫৫), ব্যাঙ্কিং কম্পানিজ ট্রান্সফার অ্যান্ড অ্যাকুইজিশান অ্যাক্ট (১৯৬৯), লাইফ ইন্সিওরেন্স কর্পোরেশন অ্যাক্ট (১৯৫৬), জেনারেল ইন্সিওরেন্স কর্পোরেশান অ্যাক্ট (১৯৭৬)। কোনো চাকুরীজীবীর চাকরির শর্ত যথেচ্ছ বদল ও ক্ষতিপূরণ না দিয়ে বিতারণের যে ধারা তা অস্বীকার করছে সংবিধানের ৩২নং অনুচ্ছেদকে।

এই বিধ্বংসী অর্থনৈতিক সমাধান এরমধ্যেই প্রয়োগ হয়েছে সাইপ্রাসে। সেখানকার সাধারণ মানুষের সঞ্চয়ের ৫০%টাকা দৃশ্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ওখানে অবশ্য আংশিক বেল-আউট হয়েছিল, যার ফলে ১লক্ষ ইউরোর নীচে যাদের সঞ্চয় তারা বেঁচে গেছে এযাত্রা; কিন্তু সমাধান যেহেতু হস্তগত হয়নি এত করেও, তাই ওই অংশভূক্তদের কাঁঠালপাতা চিবোতে থাকা বলির পাঁঠা ভাবা যেতে পারে।নিজেদেরও। 

রামগরুগরুরামযোগীরামরহিম চর্চায় বিরক্ত আমাদের জন্য শিগগির এসে যাচ্ছে ফিফা ওয়ার্ল্ডকাপ – ঘরে রাখা বোকাবাক্স মারফৎ পৃথিবীর আধুনিকতম ও বৃহত্তম ভার্চুয়াল কলোসিয়ামে প্রবেশের সুযোগ। তাছাড়াও নিত্যদিন নানাআকারের রসালো উজ্জ্বল হরেক কাঁঠালপাতার সমাহার আমাদের জীবনে। সনাতনধর্মী কিংবা বড্ডবেশী এগিয়ে থাকা নানা চ্যানেলের আবক্ষ অভিনেতা (অ্যাঙ্কর) ও সান্ধ্যতার্কিকরা রয়েছেন মুখেরটা শেষ হতে না হতে মুখের সামনে আরেকটা পাতা এগিয়ে ধরবার জন্য। নির্বিকারে চিবোতে চিবোতে তবু ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে নিতে পারি ঘষেমেজে কেমন চকচকে করে তোলা হচ্ছে অর্থনৈতিক আফস্পার খাঁড়া। 

আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট যেখানে চালু আছে, সেখানে তবু এমন নাগরিক পাওয়া যাবে যার পরিবারের কেউ গুলি খায়নি, বা প্যালেট গান যাকে ক্ষতবিক্ষত করেনি; পাওয়া যেতে পারে কয়েক অধর্ষিতা নারীও। এ অর্থনৈতিক আফস্পা জারি হতে চলেছে আসমুদ্রহিমাচল। যার থেকে রক্ষা নেই একজনেরও।

Post a Comment

0 Comments