বার বারোর বাড়বাড়ন্ত
আচ্ছা বারো সংখ্যা নিয়ে এত বাড়াবাড়ি কেন, কেউ কি বলতে পারেন ?
স্কুলে গিয়ে জানলাম 12 ইঞ্চি তে এক ফুট, বারো টা তে এক ডজন আরও পরে জেনেছিলাম যে বারো ডজনে এক গ্রোস। জানলাম বারো মাসে এক বছর আবার বারো বছরে নাকি এক যুগ। বারো ঘন্টা দিন আবার বারো ঘন্টা রাত। এদিকে আবার বারো টা রাশি বারো টা লগ্ন। কেন বাপু 360 ডিগ্রি কে বারো দিয়ে ভাগ করা। দশ বা পনেরো হলে কোন মহাভারত অশুদ্ধ হতো, সেই বারোর গেরো তে এসে ঠেকা কেন।
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ র বারো জন শিষ্য আবার প্রভু যীশুর তাই। দক্ষিণেশ্বরে ঠিক বারো টা শিব লিঙ্গ। মহাভারতে দেখি পাণ্ডব দের বারো বছরের বনবাস আবার বারো ক্লাস পাস না করলে কলেজে পড়া যায় না।
বারোটা বাজা মানে নাকি খারাপ হয়ে যাওয়া। আমরা সবসময়ই শুনি ছেলেটার বারো বেজে গেছে, জিনিসটার বারো বেজে গেছে দেশের বারো বাজতে চলেছে, ইত্যাদি। কিন্ত আমাদের ঘড়ি তে রোজ দুবার করে বারো টা বাজে, কিন্ত ঘড়ি ঠিক চলে খারাপ হয়না। তাহলে বারোটা বাজে মানে খারাপ হওয়া কেন।
বারো হাত কাঁকুড়ের তেরো হাত বিচি, এ কথা প্রায়ই শোনা যায়। আরেবাবা কাঁকুড় কখনও বারো হাতের হয়না। তাহলে এক হাত কাঁকুড়ের দু হাত বিচি বললে তো দিব্যি চলে যেত বারো হাতে নিয়ে যাবার কি দরকার ছিল, এটা বাড়াবাড়ি নয়।
মানুষ মরলে ভুত হয়, তাই নাকি মুক্তির জন্য শ্রাদ্ধ করা হয়। ভুত মরে কি না আমার জানা নেই তাহলে ভুতের শ্রাদ্ধ কোথা থেকে এলো এক ভুত হলেও নাহয় কথা ছিল কিন্ত গিয়ে দাঁড়াল কোথায় একেবারে বারো ভুতের শ্রাদ্ধ তে, কোনো মানে হয়।
আমরা জানি পাঁচ মানে সমষ্টি যেমন পাঁচ জন, পাঁচ কথা , পাঁচ রকম ইত্যাদি। পাড়ার পুজো পাঁচোয়ারি হলে হত কিন্ত কথা গিয়ে দাঁড়াল বারোয়ারি তে, আবার সেই বারোর গেরো। এরপর বারোদুয়ারি, বারো ভুঁইয়া, বারোর শেষ নেই।
এরপর যদি বারোর ওকার টা বাদ দিয়ে শুধু বার এ আসি তাহলে তো আরও গোলমাল।
বার মানে সংখ্যা যেমন একবার, দুবার, প্রতিবার, বারবার ইত্যাদি। এদিকে বার মানে দিন যেমন রবিবার, সোমবার ।
বার মানে আবার বাইরে। বার উঠোন, বার বাড়ি, বার মুখো, বার দুয়ার, বার দরিয়া আরও কত।
বার মানে রাজসভা বা রাজ দরবার। বার মানে ভার বা ওজন যেমন বার বরদার। বার মানে আবার বারণ করা।
এতেও মুক্তি নেই, বার আবার উকিল দের সমাজ কে বলা হ্য়। ঐ যেখানে বসে উকিল বাবুরা বসে কাজ করে, গল্প গুজব করে আবার কখনও বা জজসাহেব দের আর মক্কেলদের পিণ্ডি চটকায়।
আবার সাহেব দের দেশে এমন কি এখন আমাদের দেশেও বার মানে যেখানে বসে মদ্য পান করা হয়। আমরা কেউ পানশালা বলি না আমরা সব সাহেব। বার মানে সেই জায়গা যেখানে বসে মদ্যপান করে আবার কখনও একটু বেশি মদ খেয়ে একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলে।
এরপর বারফাট্টাই, বারকোষ, এতো আছেই। আবার বারবেলা হয় যখন নাকি শুভ কাজ নিষিদ্ধ তবে অশুভ কাজে কোনও বাঁধা নেই।
না না আরও আছে রসিক জন ভাল জানে যেমন বারবধু, বারবণিতা, বারনারি, বারাঙ্গনা, বার বিলাসিনী। এ ব্যাপারে বেশি কথা না বলাই ভাল তাহলে বন্ধুগন ভাববে আমি বাড়াবাড়ি করছি।
একটা কথায় এতরকম মানে বোধহয় পৃথিবীর কোন ভাষাতে নেই।
ছোটবেলায় শুনেছিলাম " হরির ওপরে হরি, হরি শোভা পায়।
হরি কে দেখিলে হরি, হরি তে লুকায়। "
কথা শুনে আমার মাথা গোলমাল হয়ে গিয়েছিল এখন আবার এই বার বারোর চক্করে পড়ে আমার প্রায় একই অবস্থা।
এই বার বারোর বাড়বাড়ন্ত নিয়ে গুনিজন রা কি দু চার কথা বলবেন তাহলে আমরা বারো জনে একটু আলোকপ্রাপ্ত হতে পারি।
সঞ্জীব মিশ্র
পার্শীবাগান, কোলকাতা
0 Comments