Shabash Feluda Zee5 Web Series Review by Subrata Chakraborty | সাবাস ফেলুদা রিভিউ

 

Shabash Feluda Zee5



যবে থেকে শুনেছি ফেলুদাকে নিয়ে আরেকটা নতুন কাজ হতে চলেছে, তবে থেকেই ওয়েট করছিলাম কবে রিলিজ হবে। ফাস্ট ডে ফার্স্ট শো না হলেও, ফার্স্ট ডে লাস্ট শো-টা অন্তত দেখা গেল। অনেকেরই যেমন পরমব্রতকে নিয়ে একটা আলাদা করে সমস্যা আছে, আমার কিন্তু তেমন ছিল না। সৌমিত্র-সব্যসাচী যুগ আমরা পেরিয়ে এসেছি। এবার নতুন কারো ফেলুদা হওয়ার কথা। সেরকম মনোভাব নিয়েই আমি দেখতে বসেছিলাম। ভালো-খারাপ দুটোই বলার চেষ্টা করছি। প্রথমে চরিত্রগুলো নিয়ে আলোচনা করব।


ফেলুদা - ফেলুদা হিসেবে পরমব্রতকে মানায় না। এ নিয়ে কারো মনে কোন ডাউট নেই। পরমব্রতর নিজের মনেও বোধহয় নেই। তবে পরমব্রত চেষ্টা করেছে প্রচুর। মানায় না, এটা ওর দুর্ভাগ্য। এই ক্ষেত্রে আবার টোটাকে খুব ভালো মানায়। কিন্তু সিরিয়াল করতে করতে তিনি এখন যে কোন ডায়লগই "শাশ ভি কভি বহু থি"- এই স্টাইলে বলেন। যে কোন ডায়লগ শুনলেই মনে হয়, ননদ বৌদিকে খোঁটা দিচ্ছে। সেটা না মানানোর থেকেও অসহ্য। 


তোপসে - ঋতব্রতকে নিয়ে কিছু বলার নেই। বেটার দ্যান ঋদ্ধি, সৌরভ, কল্পন, আয়ুষ। ইদানিংকালে দেখা গেছে সন্তুর গার্লফ্রেন্ড রয়েছে। সুতরাং তোপসে যাতে কমপ্লেক্সে না ভোগে, তাই তাকেও একটা গার্লফ্রেন্ড জোগাড় করে দেওয়া হয়েছে। হুঁ হুঁ বাওয়া, এখানকার না, দিল্লির।


নিশিকান্ত - গল্প পড়লে যে ছবিটা নিশিকান্ত হিসেবে চোখের সামনে ভেসে ওঠে, তার সাথে রুদ্রনীলের খুব একটা মিল নেই। কিন্তু তবুও নিশিকান্ত হিসেবে রুদ্রনীলকে আমার বেশ ভালো লেগেছে। অনেকেই বলেন, নিশিকান্তই হলেন জটায়ুর পূর্বসূরী। এই গল্পটা লেখার সময়‌ই সত্যজিৎ বাবু বুঝতে পারেন, একটা কমিক রিলিফের প্রয়োজন এবং পরের উপন্যাসেই জটায়ুর আবির্ভাব। কোথাও কোথাও খানিকটা ভাঁড়ামো হলেও নিশিকান্ত হিসেবে রুদ্রনীল মোটামুটি ভালো।


শশধর - ঋত্বিক ঠিকঠাক। গল্প অনুযায়ী যেটুকু যেমন অভিনয় করার কথা মোটামুটি ঠিক ঠাক‌ই হয়েছে। প্রবাসী বাঙালি, কিন্তু উচ্চারণে কোথাও প্রবাসের টান নেই!


ডক্টর বৈদ্য - এত খারাপ মেকআপ আমাদের পাড়ার নাটকেও হয় না। এটার ক্ষেত্রে অন্তত বাজেটের দোহাই দিয়ে পার পাওয়া যাবে না। আমাদের পাশের বাড়ির হুলোটাও এক ঝলক দেখেই বলে দেবে, ওটা ছদমোবেশ। আর ফেলুদার সামনে ওরকম বিচ্ছিরি মেকআপ নিয়ে ঘোরাঘুরি করছেন ডঃ বৈদ্য! আজব নমুনা।


হেলমুট - হেলমুটের যে ছবিটা গল্পে রয়েছে, তার সাথে দূর দূর তক কোনও মিল নেই। চুল দাড়ি নিয়ে হিপি সেজে থাকতো বলে বাবা চিনতে পারেনি, এটা যথেষ্ট জাস্টিফাইড ছিল। কিন্তু এখানে সেই জাস্টিফিকেশন খাটানোর জায়গা নেই। সে ব্যাটা জার্মান হয়ে, ইংলিশ বলে, হিন্দি বলে, এমনকি বাংলাও বলে, কিন্তু ভুলেও কখনো জার্মান বলে ফেলে না। যাক গে, হেলমেট থুড়ি হেলমুটকে নিয়ে কথা বলা মানে সময় নষ্ট। গল্পে ক্যারেক্টারটা ছিল খুব শেডি। কিন্তু এখানে একেবারেই ফ্ল্যাট।


শেলভাঙ্কার - ছোট চরিত্রে অরিন্দম শীল বেশ ভালো।


ইন্সপেক্টর রিঙচেঙপঙ গাংপো না রংপো, কি যেন একটা - শীলবাবুর আবিষ্কার করা ক্যারেক্টার। সৌরসেনি। অকারণ এক্সট্রা ইম্পর্টেন্স দেওয়া। ছিন্নমস্তার অভিশাপে বৌদির চরিত্রটাকে যেমন অকারণ ফুটেজ দেওয়া হয়েছিল। মহিলা দর্শকদের জন্য এই অকারণ মহিলা ইন্সপেক্টর এর ইন্ট্রোডিউস কিনা জানা নেই। পুরুষের সাথে সমান তালে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করে যাচ্ছে, ইত্যাদি, ইত্যাদি। তবে স্ত্রী চরিত্র বর্জিত আগের ফেলুদাগুলো পছন্দ করতে তো মহিলাদের কোন অসুবিধা হয়নি।


মগললাল মেঘরাজ লাইট - যারা এখনো দেখেননি তারা ভাবছেন গ্যাংটকে গন্ডগোলে মগনলাল কোত্থেকে এলো! এসেছে। সম্পূর্ণ অকারণে এসেছে। গল্পে যা যা পরিবর্তন হয়েছে, তাতেও মগনলালের আসার কোন প্রয়োজন ছিল না, তবু আনা হয়েছে এবং চরিত্রটাকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। ওয়ার্স্ট পার্ট অফ দিস সিরিজ ইজ, মগনলাল।


এবং সিধু জ্যাঠা - বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়। মনে আলাদা করে কোন দাগ কাটে না। সিধু জ্যাঠা কবে থেকে হিঙ্গোরানির মত এরকম আংটি পড়েন কে জানে!


এছাড়াও গল্পে আরো কিছু ছোট ছোট চরিত্র রয়েছে। সেগুলো সত্যজিৎ বাবুর লেখায় ছিল না, নতুন করে ঢোকানো হয়েছে। ভিলেন হিসেবে অরিজিৎ দত্তকে ভালোই মানায়।


এবার আসি গল্পে। মূল গল্প এক থাকলেও গল্পের পটভূমিতে আমূল পরিবর্তন আনা হয়েছে এবং সেটাকে ২০১৭ সালে সমসাময়িক করার জন্য গল্পে বেশ কিছু টেকনোলজির সাহায্য‌ও নেওয়া হয়েছে। গল্পের পটভূমিটাকে জাস্টিফাই করার জন্য অনেক ইতিহাস এর সাথে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এই পরিবর্তনটা আমার ব্যক্তিগতভাবে খারাপ লাগেনি। ফেলুদা তোপসের মোবাইল তো এসেছেই, মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন দেখে অপরাধী খোঁজাও এসেছে। ড্রাগ পাচার অতিশ দীপঙ্কর ডোকলাম সবই এসেছে। ফেলুদা আজকাল ব্লুটুথ স্পিকার নিয়ে ঘোরে বেটোফেন শোনার জন্য। কিন্তু ভালো যেটা, সেটা ফেলুদা টেকনোলজি ততটুকুই ইউজ করে, যতটুকু প্রয়োজন হয়। মোবাইল পকেটে থাকলেও তেমন ব্যবহার করতে দেখা যায় না। ফেলুদা সিগারেটের ব্র্যান্ড পাল্টেছে, রিপলভার‌ও। সিকিমে ধূমপান নিষিদ্ধ। ফেলুদা সিগারেট ধরাতে গেলে তোপসে বারবার সেটা মনে করিয়ে দেয় এবং ফেলুদা সিগারেট আবার পকেটে ঢুকিয়ে রাখে। এটা বেশ ভালো লাগে। এরকম ছোটখাটো কিছু ভালো জিনিস থাকলেও সমস্যাটা হলো অন্য জায়গায়।


বেশ কটা সিন যেগুলো দুর্দান্ত ড্রামাটিক হতে পারত, সেগুলোকে দায়িত্ব নিয়ে নষ্ট করা হয়েছে। বিশেষত ক্লাইম্যাক্স। এত ম্যাদামারা ক্লাইম্যাক্স বাবা কেন চাকর টাইপের সিনেমাতেও হতো না। শশধরের জোঁকের মধ্যে পড়ে যাওয়ার সিনটা খুব মিস করেছি। ওই জঙ্গলের মধ্যে শশধর ওরম ব্যাকআপ টিম কোত্থেকে পেল কে জানে!

রুমটেকের লামা নাচের সিন, প্ল্যানচেটের সিন, পাহাড় থেকে পাথর গড়িয়ে ফেলে ফেলুদা আর তোপসের ওয়ান চান্স ইন আ মিলিয়ন পরীক্ষা করার সিন- এগুলোকে যেভাবে বানানো হয়েছে, তাতে হতাশা ছাড়া আর কিছু আসে না মনে।


ফেলুদা যে সিনে ডক্টর বৈদ্যকে বলছে- আপনি অন্ধকারের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকবেন না, সেই সিনে অন্ধকারটা কোথায়, আমি খোঁজার অনেক চেষ্টা করেছি। এত মোমবাতি ফাইভ স্টার ক্যান্ডেল লাইট ডিনারেও থাকে না‌। চারিদিকে এত আলো করে প্ল্যানচেটটার পুরো ইয়ে করে দিল। ডক্টর বৈদ্যের মধ্যে যে কোনো রকম পরিবর্তন হলো, এটাও বোঝা গেল না।

আলাদা করে লামা নাচের সিনটার কথা বলব। এটা এত ড্রামাটিক, এত কালারফুল হতে পারতো, অন্তত গল্প পড়লে সেরকমই দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে ওঠে, তার .999 পার্সেন্টও হয়নি। পুরো সিরিজ জুড়েই ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক অত্যন্ত বাজে। বিক্রম ঘোষ এরকম ধ্যাড়াবেন আমি ভাবিনি। বিশেষত লামা নাচের সিনে তো বটেই। 


এছাড়াও গল্পে প্রচুর লুপ হোলস। শেলভাঙ্কারের হাতের পাশেই যমন্তক পরে রইলো, কিন্তু কেউ দেখতে পেল না! ফেলুদাকে ইন্সপেক্টর ফলো করছে, কিন্তু ফেলুদা বুঝতেই পারছে না। ফেলুদার অর্ধেক কাজ তো ইন্সপেক্টর‌ই করে দিচ্ছে! তোপসে ইন্টারনেট স্লো বলে, একটা লিংক খুলতে পারছে না। কিন্তু গার্লফ্রেন্ডের সাথে ভিডিও চ্যাট করতে পারছে! ড্রাইভারটাকে সমস্ত পুলিশ মিলে ধরে ফেলার পর, ইন্সপেক্টর ওরকম পিস্তল তাক করলেন কেন, তাইই বা কে জানে!

আরো একটা সমস্যা রয়েছে বলে আমার মনে হয়। সিরিজটা অত্যধিক বেশি স্ট্রেচড। ৪ ঘন্টা ৪৫ মিনিট টানার কোন প্রয়োজন ছিল না। আরো শর্ট ডিউরেশনে করলে সিরিজটার অনেক বেশি ইম্প্যাক্ট হতো বলে আমার মনে হয়েছে।

সব মিলেমিশে এক্সপেক্টেশনে জল ঢালা ছাড়া, আর বিশেষ কিছুই হলো না।


পুরো সিরিজটা দেখে আমার মনে হয়েছে শীলবাবু এটা বানিয়েছেন যারা গল্পটা পড়েনি, তাদের কথা ভেবে। তাছাড়া শুধু বাঙালি দর্শকের জন্য নয় বলেও আমার মনে হয়েছে।  সেই কারণেই যক্ষ্মীর মাথা, মগন লাল, গাইতুন্ডে সব মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। ভবিষ্যতের ইনভেস্টমেন্টও এখানেই করা থাকলো মনে হয়। তবে সিজন ওয়ান ভালো ভাবে চললে, তবেই না সিজন টু বেরোবে…

Post a Comment

0 Comments