নিজের গন্ধে নিজেই পাগল হরিণী। কিংবা শিকারী টারান্টুলার নিজ রসে অচল মৌতাত। যেমন এই বাংলার দিদি অ্যান্ড কোম্পানীর সরকার। ফেডারেল ফ্রন্ট না গড়লে তৃণমূল দু এক টার্মের পরে কালিঘাটের আদিগঙ্গায় পচে ভেসে যাবে।
তৃণমূলের ভবিষ্যৎ - ভবিষ্যতের তৃনমূল
নিজের গন্ধে নিজেই পাগল হরিণী। কিংবা শিকারী টারান্টুলার নিজ রসে অচল মৌতাত। যেমন এই বাংলার দিদি অ্যান্ড কোম্পানীর সরকার।
গত চৌত্রিশ বছরে যে-ধারার সমাজনীতি চেপেচুপে রেখেছিল বাম রাজনীতি, দিদি এসে তাকে মোটামুটি কবরস্থ করে ফেলে একটি খুল্লমখুল্লা জলসা বানিয়েছেন।
অজস্র তছরুপ, কারচুপি, রাহাজানি, গুন্ডামি করলেও, সর্বাধিক ভদ্রলোক সমন্বিত দল ছিল বামফ্রন্টের ছাতার তলার দলগুলো। জম্পেশ ছদ্মবেশ ছিল। লোকাল কমিটির কোটা, তোলা আদায়, স্বজনপোষণ সব ছিল। তবু বহুসংখ্যক প্রকৃত সজ্জন ব্যক্তিরা বেনোজল আটকে রেখেছিলেন। এখন একেবারে ধাপার মাঠ।
সবচেয়ে ভয়ানক প্রবণতাটির আনয়নকারী স্বয়ং দিদিমণি। বালখিল্য লোচা, অর্বাচীন ভাষাজ্ঞান, নাটুকেপনা, কস্টিউম কালচারের জবরদস্তি, চরম হঠকারিতা, ক্ষণিক চটক, সর্বোপরি ট্র্যাশ শিল্পবোধ সবাইকে অনুপ্রাণিত করেছে বীরভূমের কেষ্ট হতে।
শিল্পে দিদিমনি - কিছু নিদর্শন
The curious case of the headless statue
পড়ুন কবিতার বই - আজব ছড়া : লেখক মমতা ব্যানার্জী
আজ টেলিভিশনের স্টুডিওতে তৃণমূলের চামচা ঘুঁষি চালিয়ে চমকাই দিচ্ছে। মনে পড়ে দিদির ছড়া-কাটন। 'চমকাইতলায় চমকে দেব।' প্রবীণ হেডমাস্টার দিনদুপুরে মদে চুর হয়ে স্কুলে ঢুকেই সগর্ব ঘোষণা, তিনি তৃণমূল। কাজেই তাকে কিছু বলা যাবে না।
বাম অধ্যায়ের দ্বিতীয়ার্ধে বিখ্যাত ট্রায়োটির করিশমার মদে নেশা জোর হয়ে গিয়েছিল। অনিল-জ্যোতি-বিমান। সঙ্গে সুভাষ চক্রবর্তীর গ্ল্যামারাস সঙ্গত। ক্যাডাররাজ শিখরে এনেছিলেন প্রয়াত শ্রী জ্যোতি বসু। কোঅর্ডিনেশন কমিটি রাজ্য সরকারি কর্মীদের মৃগয়াকানন হয়ে গিয়েছিল। মজিদ মাস্টার, হুব্বা শ্যামল, হাত কাটা দিলীপ, কাশিপুরের দুলাল, এরা সরকারের নিয়ন্ত্রক হয়ে গিয়েছিল। শেষদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরেই ছিল নইলে তৎকালীন মন্ত্রীমশাই বেলেঘাটার মানব মুখার্জির ৬০০০০ টাকার স্ত্রীর চশমার বিল ক্যাগ অডিটে ধরত না।
এই নমুনাটি অবশ্য সাতগেছের সোনালী দেবীও ক্যারি ফরওয়ার্ড করেছিলেন হাল আমলে। তাঁর চশমার বিল ছিল ৯১০০০+ কিছু।
প্রমোদ দাশগুপ্তের বিখ্যাত উক্তিটি স্মর্তব্য। "প্রতিটি বাঙালিকে কমিউনিস্ট বানানো পার্টির কর্তব্য।" তবু, তিনি অন্তত বাগ্মী ছিলেন। ভালো বক্তৃতা দিতেন কংগ্রেসের প্রয়াত প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি। এখন একটি শাসককে বিনা ঘুঁষি উত্তোলনে তথ্যসমৃদ্ধ দু মিনিট বলতে শোনা যায় না। গত দুটি ব্রিগেডের দুটি বক্তৃতাকে যদি তুলনা করা যায়, মন্ত্রী হাকিম বাবু এবং দেবলীনা হেমব্রম, পাতি যাত্রা এবং গ্রুপ থিয়েটারের তুল্যমূল্য যেন।
এ সেই আধুনিক যাত্রা, "স্বামী গেল শহরে।" ধানের নাড়া তোলা মাঠে স্বামীর অনিবার্য ক্যাবারে দর্শনে আজকের চিৎপুর প্রোডাকশন। আজকের যাত্রা উৎসবের সিংহভাগ যেমন, তেমনই হাকিমবাবুর অনর্থক হস্তপদসঞ্চালন। এমনই এক অর্বাচীন, খেলো, রোয়াবভরা সংস্কৃতির চল এখন। গভীর মেধার আর যেন কোনো প্রয়োজন নেই। যা চালাব, তাই চলবে রমরম করে। সরকারপ্রিয় অরিন্দম শীল প্রবন্ধ লিখছেন মৃণাল সেনের বিষয়ে। সেও নাকি পড়তে হবে!
দিদি বিলক্ষণ জানেন, তার সৃষ্ট শিশুরা এখন দানবে পরিণত রাজ্যের প্রতিটি অঞ্চলে ব্লকে জেলায়। তাই অনুব্রতকে 'দুষ্টু ছেলে' বলে মৃদু তিরস্কারে দল চালাতে হয়। ব্রিগেডে গলায় শিরা তুলে ফেলে বলতে হয়, দুর্নীতিবাজদের তাঁর দলে ঠাঁই নেই। তবে তো ঠগ বাছতে একরাতেই গাঁ উজাড় হয়ে যাবে। রাজীব কুমারকে ধরলে তৃণমূলের সমূহ বিপদ। তাই যেকোনো উপায়ে নগর কোতোয়ালি সুরক্ষিত রাখতে হবেই।
আর তাঁর সৃষ্ট এই ধর্নাতলার আয়োজন একদম মাপা নিক্তি ধরা প্ল্যান। যে পাপচক্রের ভিয়েনে তাঁর দল মধুর বৃন্দাবন, কেন্দ্রে তাঁর নিজের দল না থাকলে মুহূর্তে মুহূর্তে কাঠি খেয়ে খেয়ে মৌতাত ওষ্ঠাগত করে দেবে আরেক ক্ষমতাবান। বিজেপি নিজের পেটভর্তি পুরীষ নিয়ে দিদিকে ইসবগুল সাপ্লাই দিতে চাইবেই। রতনে রতন চেনে, শুয়োরে চেনে কচু। কোথায় কাঠি মারলে মণ্ডপে ধুন উঠবে, ওরা বিলক্ষণ জানে।
তাই দিদির দিল্লি অভিযানের মহড়া ধর্নাতলায়। ফেডারেল ফ্রন্ট না গড়লে তৃণমূল দু এক টার্মের পরে কালিঘাটের আদিগঙ্গায় পচে ভেসে যাবে। ওয়ান ম্যান আর্মি। দিদি চোখ বন্ধ করলে মূষল পর্ব শুরু। চোরাগোপ্তা আক্রমণে, পাল্টা সংঘর্ষে তৃণমূলে ধুনি জ্বলে যাবে।
যুবরাজের অত করিশমা নেই পিসির সাম্রাজ্য জোড়াতালি মেরে কিছু বছর অন্তত চালাবে। কাকা জেঠা মেসো মাসি বৌদি ভায়রা সবকে সব একহাত জিভ বার করবে গুপ্তধন হাতাতে।
যুবরাজের অত করিশমা নেই পিসির সাম্রাজ্য জোড়াতালি মেরে কিছু বছর অন্তত চালাবে। কাকা জেঠা মেসো মাসি বৌদি ভায়রা সবকে সব একহাত জিভ বার করবে গুপ্তধন হাতাতে।
তাই ব্রিগেডে সর্বাধিক মাথা ব্যথা ছিল দিদির। অন্ডা গন্ডা অগা বগা জুটিয়ে একবার দিল্লির মসনদে বসলে সবাইকে লেঙ্গি মেরে একছত্র অধিপতি তিনিই হবেন। আর এ রাজ্যে তখন চিরবসন্ত বিরাজ করবে। তাঁর প্রমোট করা যুবরাজের সিংহাসন নিষ্কণ্টক হবে।
তাই দিদির এত আয়োজন, এত ধর্না, এত ফুসুর ফুসুর, এত ফেডারেল ফেডারেল গান। এক সারদাই যদি তাঁকে এইভাবে কুপোকাত করে দেয়, সামনে বিশ তিরিশ সারদাতুল্য নানাবিধ কেস। কে সামলাবে এত চাপ? কেন্দ্রের ক্ষমতার রাশটি হাতে চাইই চাই। তবেই কিস্তিমাত। কেন্দ্রের সিবিআই এবং রাজ্যের সিআইডি একহাতে এলে তবেই নিরঙ্কুশ সাম্রাজ্যবিস্তার।
দুই হায়না মুখোমুখি অন্ধকারে। দুই শিবিরেই দুর্নীতি চরমে শিল্পিত। সদ্য যোগ দিয়েছে আম্বানির মতো ধনকুবের রাঘব বোয়ালেরা। পার্টির ফান্ড এবার উপচে পড়বে। ক্যাডারের বালবাচ্চা পতাকা হাতে চমকাবে পথে-ঘাটে। দামাল ছেলে বলে দিদি পিঠ চাপড়ে দেবে। হুলিগানিজম শাসককে মাটিতে পুঁতে ফেলে জেনেও কোনো শাসকের এই লকলকে লোভ থেকে মুক্তি নেই।
তৃণমূল নিজের কবর নিজে খুঁড়ে চলেছে দায়িত্বসহকারে।
0 Comments