চাঁদ সওদাগর থেকে দ্বারকানাথ, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় থেকে পূর্ণেন্দু চ্যাটার্জী, ব্যবসা মানেই বাঙালী - আর বাঙালী মানেই ব্যবসা - কী অবাক হচ্ছেন ? না এখন #BENGALMEANSBUSINESS - আসুন দেখি এক আম বাঙালীর চোখ দিয়ে ।
লেখাটি আমার সুহৃদ পার্থ সারথী গিরির লেখা, ওর লেখা অপনার ভালো লাগতে পারে, অথবা প্রচন্ড খারাপ মনে হতে পারে, - কমেন্টে গালাগালিও করতে পারেন, তবে জোর দিয়ে বলতে পারি উদাসীন থাকতে পারবেন না ।
A Random Gate of Bengal Business Summit |
গোটা সল্ট লেক একটা ক্যাপশনে ঢেকে ফেলা হয়েছে। "BENGALMEANSBUSINESS"
হ্যাঁ, কোনো স্পেস নেই শব্দের ভেতর। ঠাসা। যতিহীন।
হ্যাঁ, কোনো স্পেস নেই শব্দের ভেতর। ঠাসা। যতিহীন।
দুরকম অর্থ হতে পারে। বাংলা ব্যবসা জানে। অথবা, বাংলা মানে ব্যবসা।
শেষোক্ত অর্থটি বেশ ভয়ানক বটে। বাংলা মানেই যদি ব্যবসা হয়, তবে আর বাংলা না বলে, গুংলা বা বাংরাট বলাই ভালো।
মানতেই হয় যে, বাংলার বাঙালিয়ানা অব্যবসায়ী মনোভাবে পরিস্ফুটিত হয়েছিল ব্রিটিশ পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সময়েও। বাংলা মানে বেনিয়মের এলেবেলে বাঁচা। বাংলা মানে অগোছালো। বাংলা মানে ভাবুক জাত। বাংলা মানে আড্ডাপ্রিয়তা।
হকারের গ্রাসে ফুটপাথ - সেক্টর ৫ |
বাংলা মানে যেখানে সেখানে অনুমতিহীন পসরা সাজিয়ে হকারি, যার ফলে আজ গোটা শহরটা অদ্বিতীয় বেনিয়মের সাজানো সাম্রাজ্য। ফুটপথ পথচারীর নয়। গুমটির। সরকার একদিকে সমূহ হকারকে লিখিত অনুমতি দিচ্ছে ফুটপাথ গ্রাস করে ফেলতে।
উত্তর কলকাতা ছেড়ে সল্ট লেকের মতো সুপরিকল্পিত নগরেও গুরুত্বপূর্ণ সব ফুটপাথ ভরা কিয়স্ক এবং গুমটি। অর্থাৎ পথে নেমে হাঁটব যাতে ট্রাফিক শ্লো হয়ে যায় এবং প্রতিদিন গাড়ির ধাক্কায় কেউ না কেউ জখম হোক। ঠিকই তো। বাংলা মানেই ব্যবসা।
যেখানে সেখানে পসরা মানেই ব্যবসা : পার্ক স্ট্রিট, কলকাতা |
বাংলা ব্যবসা বোঝে কি? না, ব্যবসা বুঝলে নিয়মে ব্যবসা হত। বাংলায় বেনিয়মে ব্যবসা করাটাই নিয়ম। বাহানা অনেক। এত গরীব গুর্বোর রাজ্যে অত নিয়ম টিয়ম মানলে চলে না। নিয়মের গাঁড় মারি। নিয়মের কথা যে বলে সে শালা বুর্জোয়া প্রতিক্রিয়াশীল। অপারেশন সানশাইন ফালতু ন্যক্কারজনক পদক্ষেপ। হকারমুক্ত পথে হাঁটা তো ফালতুই বটে।
বাহানা ছিল, তুমি হকারের পরিবারকে খাওয়াবে? অত মুরোদ নেই যখন চুপ থাকো। হকার খেটে খাক যেখানে খুশি। গালিফ স্ট্রিটে হাতিবাগানের হকারদের পুনর্বাসনের জন্য বিশাল বিল্ডিং এখন ভগ্নপ্রায় এবং পাতাখোরদের নৈশ ঠেক। ঠিক। বাংলা ব্যবসা বোঝে।
গাড়িহাটের ফুটপাথে পসরা |
বাম আমলে চোদ্দ হেঁচকিতে হকার সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি। এই শাসক আরো জমিয়ে বসেছে। কলকাতা ক্রমশ ছেঁড়া ত্রিপল এবং কেবলের তারে জালে খাবি খাওয়া সুন্দরী ভাগাড়। এখানে এসো, পথিককে মারো। নিজে বাঁচো। ঠিক। বাংলা ব্যবসা বোঝে।
পশ্চিমবঙ্গ জিডিপির হাইয়েস্ট রেটেড স্টেট এখন। তাই তো আর কোনো বাহানা শোনা হবে না। একটা প্রাচীন শহরকে গাধার গাঁড়ের নন্দনবন বানাই। এখানে ব্যবসা হয় কত্তা। বেওসা হয়। পরিচ্ছন্নতা, নিয়ম, সহজ সহাবস্থান এসব ভাটের বুলি। পোঁদে কাপড় পেটে ভাত জুটলে তবে এস্থেটিকস মারাও। এত গরীবের দেশে নিয়ম মারাচ্ছে!
কলকাতা শহর মুড়ে ফেলা হয়েছে #BENGALMEANSBUSINESS |
ঠিক। একটা বৃহত্তম মহানগরী ক্যাকোফোনি, অবাধ বিজ্ঞাপন এবং ঠাসা রাস্তাঘাটে মানসিক রোগের শহর। এখানে মৃত্যুপথযাত্রীকে ডিঙিয়ে আমরা চলে যাই। কেন দেখব? গোটাটাই তো ব্যবসা জোন। আপনি বাঁচলে বাপের নাম। ফুটপাথ না পেয়ে রাস্তায় লোক হাটছে অবাধে। হর্নের আওয়াজে স্নায়ু অসাড়। কে কাকে বাঁচাবে? মারাই যেখানে বেঁচে থাকার মূখ্য উপাদান, বাঁচাতে যাব কেন? আমরা ব্যবসা বুঝি যে! ঘাতকবোধ নিয়ে দিনগত।
হ্যাঁ আমরা ব্যবসায়ী জাতে উত্তরিত হচ্ছি। স্পেশাল ইকনমিক জোন ছিল না তেমন। এবার সেটি আসছে। সারাদিনমান আমার পরিচয় একটি নম্বর মাত্র। পার্থ মানে একটি নম্বর। দিনান্তে পথে নেমে রাস্তার তীব্র হর্ন খেতে খেতে গৃহাভিমুখী। স্নায়ু আমাদের সর্বদা তীক্ষ্ম এবং শাণিত। মারব সবাইকে। মেরে বাঁচব। একা বাঁচব। কাউকে বাঁচতে দেব না। আমরা ব্যবসা বুঝতে যাচ্ছি।
"#BENGALMEANSBUSINESS"
লেখক পরিচয় : পার্থ একজন বৈদ্যুতিন গণমাধ্যমের কর্মী - পেশাগত ভাবে একজন অভিজ্ঞ সংকলক।
কেমন লাগলো পার্থর লেখা জানান
0 Comments