ওরা যত বেশি জানে, তত কম মানে। তাই...রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষকরা এখন রাস্তায় | নিজেদের ভারতীয় না বলা পরীক্ষার্থীও চাকরি করছেন বহাল তবিয়তে | দেখা যাচ্ছে এমন কিছু স্কুলে প্রধান শিক্ষককে নিয়োগ করা হয়েছে যেখানে ইতিমধ্যে প্রধান শিক্ষক রয়েছেন | অবশ্য খেলা-মেলা-দান-খয়রাতি-ভাতা চলছে - চলবে

রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষকরা এখন রাস্তায়

ওরা যত বেশি জানে, তত কম মানে। তাই...

সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক স্কুলে প্রধান শিক্ষকের প্যানেল;  দেখা যাচ্ছে কারুর নম্বর বাড়িয়ে, কারুর কমিয়ে, ফেলকে পাশ দেখিয়ে, পাশকে ফেল করিয়ে চাকরি দেওয়া হয়েছে হাজার হাজার; ভ্যাকেন্সি কোডে নামের অদলবদল বা একই স্কুলে একাধিক 'প্রধান' শিক্ষকের শূন্যপদ তৈরির মত ঘটনা তো ঘটছে মুড়ি মুড়কির মত।- পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষা ব্যাবস্থায় ব্যাপক দুর্নীতি নিয়ে লিখলেন : অভিরূপ ঘোষ 


পাশাপাশি রাখুন তিনটে ঘটনা।

এক, রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষকরা এখন রাস্তায়। সল্টলেক উন্নয়ন ভবনের সামনে আমরণ অনশনে বসেছেন আঠারো জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। সাথে ধর্ণায় বসেছেন হাজার হাজার প্রাইমারি টিচার। প্রতিদিনই সংখ্যায় বেড়ে চলেছে ভিড়ের মুখগুলো। এবং, এবং পুরো আন্দোলনটাই অরাজনৈতিক! কি দাবি ওদের? খুব সামান্য। ওরা পিআরটি স্কেল চায়। উচ্চমাধ্যমিক যোগ্যতায় নিয়োগ করেও ওদের মাধ্যমিক যোগ্যতার বেতন দিচ্ছে সরকার - গোটা দেশে একমাত্র পশ্চিমবঙ্গে। আর নিজেদের প্রাপ্য বেতন নিয়ে যখনই ওরা আওয়াজ তুলতে শুরু করলো, তখনই সম্পূর্ণ অনৈতিক এবং বেআইনিভাবে চোদ্দজন প্রাথমিক শিক্ষককে বদলি করে দেওয়া হল অনেক দূরে - কাউকে বাড়ি থেকে ৪০০ কিমি দূরে আর কাউকে দুর্গম ভুটান বা সিকিম সীমান্তে। নিজেদের প্রাপ্য বেতন সমেত সহকর্মীদের নিজের নিজের জায়গায় পুনর্বহাল করার দাবি নিয়ে একপ্রকার বাধ্য হয়ে ওরা আজ রাস্তায়।
দুই, খুব সম্প্রতি সামনে এসেছে এসএসসি সংক্রান্ত সিএজি রিপোর্ট। দেখা যাচ্ছে কারুর নম্বর বাড়িয়ে, কারুর কমিয়ে, ফেলকে পাশ দেখিয়ে, পাশকে ফেল করিয়ে চাকরি দেওয়া হয়েছে হাজার হাজার। স্বাভাবিকভাবেই যারা ওই পদের যোগ্য ছিল, তাদের অনেকেই দুর্নীতির হাওয়ায় ভেসে গেছে খড়কুটোর মত। কোরাপশনের শিকড় পৌঁছে গেছে এত গভীরে যেখানে নিজেদের ভারতীয় না বলা পরীক্ষার্থীও চাকরি করছেন বহাল তবিয়তে। লিখিত পরীক্ষার নাম্বার, মার্কশিট বা ওএমআর বদলে গেছে হাজারে হাজারে। অবশ্য পশ্চিমবঙ্গবাসীর এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কিভাবে দলবদলের সন্ধ্যেয় কোনো এক আশ্চর্য জাদুবলে পরেশ অধিকারীর মেয়ে চলে এসেছিল লিস্টের একেবারে এক নম্বরে, সেটা অজানা নয় আপামর বাঙালির।
তিন, খুব সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক স্কুলে প্রধান শিক্ষকের প্যানেল। নিয়োগও শুরু হয়ে গেছে। দেখা যাচ্ছে এমন কিছু স্কুলে প্রধান শিক্ষককে নিয়োগ করা হয়েছে যেখানে ইতিমধ্যে প্রধান শিক্ষক রয়েছেন। আবার এমন কিছু শহরকেন্দ্রিক বা ভালো অবস্থানের স্কুল ভ্যাকেন্সি লিস্ট থেকে মুছে দেওয়া হয়েছে (নিয়োগের আগেই) যেগুলো প্রার্থীদের পছন্দের একেবারে শুরুর দিকেই থাকে। ভ্যাকেন্সি কোডে নামের অদলবদল বা একই স্কুলে একাধিক 'প্রধান' শিক্ষকের শূন্যপদ তৈরির মত ঘটনা তো ঘটছে মুড়ি মুড়কির মত।

এখন প্রশ্ন হল এই তিন ইস্যুতে সরকারের অবস্থান কি?

প্রথমক্ষেত্রে, অর্থাৎ প্রাথমিক শিক্ষকদের ন্যায্য বেতন সংক্রান্ত বিষয়ে সরকার চেষ্টা করছে ফ্রন্টফুটে খেলার। এমন নয় যে একদিনের বঞ্চনাতেই পথে নেমেছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তাদের এই দাবি বহুদিনের। শুরুতে আবেদন-নিবেদন-অনুরোধ কম করেননি মাস্টারমশাই-দিদিমনিরা। দিল্লি-কলকাতায় ডেপুটেশনও দিয়েছেন অনেকবার। তবে কিনা এসব করে চিঁড়ে ভেজার রাজ্য এটা নয়। মৌখিক আশ্বাসের বেশি কোনোদিনই কিছু মেলেনি। তাই শেষমেষ ওনারা একদিন পথে নামলেন। আর সরকার কি করলো! তুললো লাঠি, দাগলো জলকামান, ছুঁড়লো টিয়ার গ্যাস। রাজপথ তখন যেন একটা ছোট্ট যুদ্ধক্ষেত্র। আর এসবের শেষে? আবারও মৌখিক আশ্বাস। তবে এবার বেঁধে দেওয়া হল সময় - পনেরো দিন। ওই একপক্ষেই সরকার করে দেবে যাবতীয় সমাধান।
কিন্তু না, পনেরো দিন পেরিয়ে গেলেও কিচ্ছুটি হল না। তাই শেষমেষ ওনারা রাস্তা নিলেন সত্যাগ্রহের - মহাত্মা গান্ধীর সৌজন্যে সারা বিশ্ব যাকে চেনে অনশন সত্যাগ্রহ নামে। এ এক অব্যর্থ ওষুধ - চম্পারণ থেকে আমেদাবাদ হয়ে সিঙ্গুর(?) অব্দি যার সাকসেস রেট কমবেশি একশো শতাংশ। আর কোল্যাটারাল ড্যামেজ? অলমোস্ট জিরো। শ্রীরামালু থেকে আন্না অবধি তাই অনশনই প্রধান অস্ত্র।
তবে একটু ভুল ছিলেন আমাদের স্যার-ম্যাডামরা। ভেবেছিলেন সরকারের প্রাণ আছে। ভুল ভাঙলো যখন দেখলেন আন্দোলনের জায়গা থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে জলের ট্যাঙ্ক, কেটে দেওয়া হচ্ছে আশপাশের কিছু জায়গার বিদ্যুৎ সংযোগ আর মোবাইলের স্ক্রিনে বারবার ভেসে আসছে মন্ত্রীমশাইয়ের হুমকি। ওহ হ্যাঁ, শুধু মন্ত্রীমশাইকে বলেই কি লাভ ! যাঁর অনুপ্রেরণায় সই থেকে খই ভাজা সমস্ত কাজ করেন উনি, তিনিই তো প্রকাশ্য সভায় পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছেন যে বিধায়কদের ভাতা বাড়তেই পারে, তবে শিক্ষকরা ন্যায্য বেতন চাইলে যেতে হবে কেন্দ্রে, দিল্লিতে।
অবশ্য খেলা-মেলা-দান-খয়রাতি-ভাতা চলছে - চলবে। শিক্ষা আনে চেতনা আর তোষণ আনে ভোট।
কে না জানে, ভোট শাসকের মহার্ঘতম সম্পদ। 

আপনারা মতামত জানান কমেন্ট বক্সে 



Post a Comment

0 Comments