নূপুর শর্মার মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক - জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষিতে - কিছু চিন্তা কিছু কথা

 
Nupur Sharma's Comment on Mohammad

নূপুর শর্মার নবীকে নিয়ে করা মন্তব্যের জেরে তোলপাড় সারা বিশ্ব, এর মাঝে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষিতে কিছু স্বাভাবিক আলোচনা ও প্রশ্নের অবতারণা করেছেন হীরক মুখার্জী


ওভার এক্সাইটেড এবং শর্ট টেম্পারড হয়ে যাচ্ছেন সবাই।
ব্যাপারটা অত সহজ নয় যতটা আপনারা ভাবছেন।

আপনারা ভাবছেন বিজেপির এখন পার্লামেন্টের দুই কক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে মানেই বিজেপি এখন সর্বশক্তিমান সর্বেসর্বা হয়ে গেছে।

তাই বিজেপি এখন, যখন তখন যা ইচ্ছা তাই করে দিতে পারে।
যখন তখন জ্ঞানভাপী মসজিদ ভেঙে মন্দির বানিয়ে দিতে পারে, যখন তখন তাজমহল টেকওভার করে নিয়ে মন্দির বানিয়ে দিতে পারে, যখন তখন UCC চালু করে দিতে পারে, যখন তখন নতুন সংবিধান রচনা করে ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র ঘোষণা করে দিতে পারে।
কিন্তু ব্যাপারটা সেইরকম নয়।

মাকু সেকু জেহাদীরা ওৎ পেতে বসে আছে বিজেপিকে গদি থেকে ফেলার জন্যে।

১০০ কোটি হিন্দুর মধ্যে খুব বেশি হলে ১০ কোটি হিন্দু হিন্দুরাষ্ট্রের জন্য মাঠে নেমে সক্রিয় ভাবে লড়ছে।
২০ কোটি হিন্দু ঘরে বসে সোশ্যাল মিডিয়ায় লজিক্যাল সাপোর্ট দিচ্ছে।

৫০ কোটি ল্যাদখোর হিন্দু ঘুমন্ত অবস্থায় ভাবছে গ্যাসের দাম ৫০০ র নিচে কখন হবে, পেট্রোলের দাম ৫০ এর নিচে কখন হবে, সর্ষের তেলের দাম কখন কমবে, ৫০০ টাকার সরকারি ভাতাটা ১০০০ হলে ভালোই হয়, ইত্যাদি ইত্যাদি তাদের জন্য ভারতবর্ষ হিন্দুরাষ্ট্র হোক বা গজবা-ই-হিন্দ কোনো গুরুত্ব রাখে না। তাদের কাছে আপাতত বর্তমান সময়টা একটু আরাম আয়েশ করে নির্ঝঞ্ঝাটে কাটানোই মূল লক্ষ্য।

আর বাকি ২০ কোটি হিন্দু হচ্ছে সেকু মাকু নেকু লিবারাল ধান্দাবাজ বুদ্ধিজীবী; তারা অলরেডি মুসলিমদের পক্ষে যোগদান করেছে এবং মুসলিমদের থেকেও তারা বেশি ভয়ঙ্কর।

কিন্তু অপরপক্ষে ৩৫ কোটি মুসলিম কিন্তু নিজেদের ধর্ম রক্ষায় এককাট্টা একজোট।
এই ৩৫ কোটি মুসলিম কিন্তু ১০০ কোটি হিন্দুর থেকেও অনেকবেশি ফেরোসাস, ডেসপারেট, এবং নিজ ধর্মের প্রতি এদের Do or Die ডেডিকেশন।

সুতরাং পার্লামেন্টের সিট সংখ্যার দিক দিয়ে বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হলেও ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার দিক দিয়ে কিন্তু মুসলিমপক্ষ হিন্দুপক্ষের থেকে অনেকবেশি শক্তিশালী।

কারণ মাত্র ১০ কোটি কট্টর হিন্দু ময়দানে নেমে হিন্দুত্ব রক্ষার জন্য লড়ছে।
অপরদিকে ৩৫ কোটি মুসলিম + ২০ কোটি সেকু মাকু নেকু লিবারাল বুদ্ধিজীবী একজোট হয়ে হিন্দুত্বকে ধ্বংস করার জন্য লড়ছে।

তাই Obviously খাতায় কলমে বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হলেও প্র্যাকটিক্যাল ফিল্ডে হিন্দুরা এখনও জেহাদী জোটের তুলনায় অনেক অনেক বেশি দুর্বল, অনেকবেশি পিছিয়ে আছে।

এই কারণেই বিজেপি নেতৃত্বকে প্রত্যেকটা পদক্ষেপ পোটেনশিয়ালি জল মেপে মেপে ফেলতে হচ্ছে।
কঠোর হাতে দমন পীড়ন করে, তাড়াহুড়ো করে সবকিছু করতে গেলেই বিজেপি মসনদ হারাতে পারে।
আর বিজেপি মসনদ হারালে সমস্ত আশা ভরসাও ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে।

তাই বিজেপি নেতৃত্ব ধীরে ধীরে জল মেপে মেপে স্মুথলি এগোচ্ছে, যাতে সাপও মরে যায় আর লাঠিও না ভাঙে।

আমার বিশ্বাস বিজেপি ক্ষমতায় টিকে থাকলে ধীরে ধীরে আমাদের সমস্ত উদ্দেশ্যই পূরণ হবে।
তাড়াহুড়ো করলে হবে না।

কখনও দু-পা এগিয়ে, কখনও এক-পা পিছিয়ে, ধৈর্য্য ধরে ময়দানে টিকে থাকতে হবে।
ক্রমাগত প্রতিটা হিন্দুকে জাগিয়ে তুলতে হবে, একজোট থাকতে হবে, লক্ষ্যে অবিচল থাকতে হবে, নেতৃত্বের উপর ভরসা রাখতে হবে, এটা দু পাঁচ বছরের গল্প নয়, এটা একটা কন্টিনিউয়াস প্রসেস।
যতবেশি সংখ্যক হিন্দু একজোট হয়ে দৃঢ় ভাবে এক ছাতার তলায় আসবে তত তাড়াতাড়ি আমাদের লক্ষ্য প্রাপ্তি হবে।

আর নিজেদের মধ্যে বিভাজন করলেই লক্ষ্য প্রাপ্তিতে দেরী হবে, অসফল হবে।

জানা যাচ্ছে নুপুর শর্মার ইস্যু আন্তরজাতিক রূপ নিয়েছে। এবং আরব কান্ট্রিগুলি ভারতের সঙ্গে তেলের চুক্তি স্থগিত করে দিয়েছে।





ঘরে বাইরে উপর ক্ষেত্রেই চাপের মুখে পড়েছে বিজেপি সরকার, এতে শুধু জেহাদিরাই যুক্ত নয় বাম কংগ্রেসী লিবারালরাও যুক্ত আছে ইস্যুটাকে আন্তর্জাতিক স্তরে নিয়ে যাবার জন্য।

এমতাবস্থায় দল ও দেশকে বড় ক্ষতির হাত থেকে বাঁচানোর জন্য ছোট ক্ষতি স্বীকার করতে হচ্ছে।
এবং অন্তরের ইচ্ছা না থাকলেও ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে নুপুর শর্মাকে সাসপেন্ড করতে হয়েছে।
লক্ষ্য করে দেখবেন কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএম সব দলই বিভিন্ন সময়ে ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে এই ধরনের পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়।
বিজেপিও তার ব্যাতিক্রম নয়।

এখন আমরাই যদি দলের ভিতরে ভিন্ন মত তুলে ভাঙন সৃষ্টি করি তাহলে হিন্দুদের ভবিষ্যত কি হবে ভেবে দেখেছেন?


বিরোধীরাও তো এটাই চাইছে।
একদিকে ওরা নানা ভাবে ভয় দেখিয়ে বিজেপি বিরোধী মুসলিম ভোটকে একজোট করছে।
অন্যদিকে নানা ভাবে সুকৌশলে ট্র্যাপে ফেলে হিন্দুদের একতায় ভাঙ্গন ধরাতে চাইছে। আর আপনিও সেই ফাঁদে পা দিচ্ছেন।

আর সবথেকে বড় কথা হলো যে নুপুর শর্মাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে তার নিজের কোনো খেদ নেই সাসপেন্সন নিয়ে। বরং সে হাসিমুখে মেনে নিয়েছে এবং আজকে টুইট করে নিজের বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে। কারণ সে রাজনীতিটা ভালো বোঝে, বর্তমান পরিস্থিতিতে ড্যামেজ কন্ট্রোল করা কতটা জরুরী সেটা সে জানে।



অথচ বাম কংগ্রেসী মিডিয়ার পাল্লায় পড়ে কিছু অতি হিন্দুত্ববাদী আবাল সাপোর্টার নেচে মরছে।
যাকে বলে মায়ের চেয়ে মাসীর দরদ বেশি কিম্বা বাঁশের চেয়ে কঞ্চি দরো।
আবেগ রাখা ভালো কিন্তু ভাবাবেগে বয়ে গিয়ে নিজের পায়ে কুড়ুল মারাকে বোকামি বলে।

এই সময়ে দলের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে নিজেদের শক্তিহীন না করে বরং আরো ১০০ জন হিন্দুকে কট্টর ভাবে একছাতার তলায় নিয়ে আসার চেষ্টা করুন, যাতে নুপুর শর্মার মতন মেয়েদের সত্যি কথা বলে পরের বার সাসপেন্ড হতে না হয়।
মনে রাখবেন ৫৭ টা ইসলামিক কান্ট্রির মতন আমাদের দেশের ১০০% হিন্দু জনগন যদি নিজের ধর্মের প্রতি ফুল ডেডিকেটেড এবং একজোট থাকতো তাহলে নুপুর শর্মাদের আজকে টিভিতে বসে জ্ঞানভাপী নিয়ে ডিবেট করতে হতো না, বরং সোজা মসজিদে ঢুকে নিজেদের অধিকার দখল করে নিতাম।
সেই জায়গাটা তৈরি করার চেষ্টা করুন আগে।
তবেই আপনার-আমার নুপুর শর্মার পাশে দাঁড়ানো সার্থক হবে।।

কলমে: হীরক মুখার্জী

আপনাদের মতামত জানান কমেন্ট করে। 

Post a Comment

0 Comments